চট্টগ্রামে বাগে পেয়েও একটুর জন্য ইংল্যান্ডকে হারানো যায়নি। ছিল ২২ রানে হারের আক্ষেপ। কিন্তু ঢাকায় সুযোগটা মিস করল না বাংলাদেশ। তিন দিনেই শক্তিশালী বৃটিশদের ১০৮ রানে হারিয়ে ঐতিহাসিক এক টেস্ট জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ১০ টেস্টে এই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেল টাইগাররা। এই মাপের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে টেস্টে আগে জেতেওনি বাংলাদেশ। ৯৫ টেস্টে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অষ্টম জয়। মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংসে ৬ উইকেট ও সাকিব আল হাসান ৪ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের দ্বিতীয় ইনিংস ১৬৪ রানে গুঁড়িয়ে দিলেন। সেই সাথে ২ ম্যাচের সিরিজটা ১-১ ড্র করল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৬ রান তুলে রবিবারই ইংল্যান্ডের সামনে ২৭৩ রানের টার্গেট দিয়েছিল বাংলাদেশ। পারেনি ইংলিশরা।
এই ম্যাচ কোনো স্বাভাবিক ম্যাচ না। ক্রিকেট বোদ্ধা-বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করার টেস্ট। এখানে তিনদিনে পড়ে ৪০ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনাররা নেন ইংল্যান্ডের সবগুলো উইকেট। এই তৃতীয় দিনে ১৭ উইকেটের পতন দেখেছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৬ রান বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের ভয় ধরানো ব্যাটিংয়ের পর মেহেদী ও সাকিবের অমর কীর্তি। মেহেদী ৬ উইকেট নিলেন। ম্যাচে তার ১২ উইকেট হলো। সাকিব চার বলে ৩ উইকেট নেন। ইনিংসে ৪ ও ম্যাচে ৫ উইকেট তার। ইংলিশদের কফিনে শেষ পেরেকগুলো তিনিই ঠুকেছেন। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০০ রান তোলা ইংল্যান্ড ১৬৪ রানেই অল আউট! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দশম টেস্টে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। নিজেদের ৯৫ টেস্টের ইতিহাসে এটি মাত্র অষ্টম জয়। মেহেদী ৭৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই ইনিংসে। ৮২ রানে ছিল ৬ উইকেট প্রথম ইনিংসে। ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সিরিজেরই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মোট ১৯ উইকেট নিয়ে।
এ এক আশ্চর্য টেস্ট! এই মিরপুরেই বাংলাদেশের ২০৯ রান তাড়া করে ২০১০ সালে ৯ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এশিয়ায় ওটাই চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ইংলিশদের। তাদের সামনে তাই রেকর্ড জয় করে জেতার চ্যালেঞ্জই দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু শঙ্কা তো ছিলই। ইংলিশরা যে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০০ রানে চলে গেল চা বিরতিতে!
কিন্তু চরম নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ছিল এই ম্যাচ। বাংলাদেশের টেস্ট মানেই হালে এই অবস্থা। চা বিরতির পর টিনএজার অফ স্পিনার মেহেদী প্রথম বলেই আঘাত হানেন। বেন ডাকেট (৫৬) বিদায় নেন। এরপর আঘাত হানতেই থাকেন তিনি। অভিজ্ঞ সাকিবের ঘুর্ণীতে পরে খড়কুটোর মতো উড়ে যান ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ২২.৩ ওভারে ১০ উইকেট নিয়ে দেশের শেষ বিকেলটাই উৎসবে রাঙিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় আঘাতটা সাকিবের। ইংলিশদের সেরা ব্যাটসম্যান জো রুট (১) এলবিডাব্লিউর শিকার হয়েও রিভিউ নেন না। রিভিউ দুবার নিয়ে বেঁচে যান অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ৪০ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারাল ইংল্যান্ড।
১২৪ রানের সময় মেহেদীর জোড়া আঘাত। এবার ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন গ্যারি ব্যালান্স (৫) ও মঈন আলি (০)। পরের ওভারে ম্যাচে মেহেদী দশম শিকার বানান কুককে (৫৯)। ইংলিশদের লোয়ার অর্ডার ভয়ঙ্কর। প্রথম ইনিংসে অষ্টম উইকেট জুটিতে ছিল ৯৯ রান। তাই বাংলাদেশের নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই। চেপে ধরা ইংলিশদের মাটিতে শুইয়ে ফেলতে তাই চেষ্টার শেষ নেই। একটি ওভার বিরতি দিয়ে আবার মেহেদীই উল্লাসে মাতান সবাইকে। এবার জনি বেয়ারস্টো (৩) নেই।
হামলার মূল দায়িত্ব সাকিব ও মেহেদীর। বেন স্টোকস (২৫) সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও ১৩ রানের সময় বেঁচে যান। কিন্তু মনে রাখার মতো এক ওভার করেন সাকিব। যেখানে ৪ বলে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন তিনি। স্টোকসেক বোল্ড করে স্যালুট ঠুকে দেন সাকিব! ওয়ানডেতে স্টোকসের বাড়াবাড়ি ভোলেননি সাকিব! পরের বলে আদিল রশিদ (০) নেই। হ্যাটট্রিক হলো না। কিন্তু জাফর আনসারি (০) ইমরুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
এই ম্যাচের চিত্রনাট্যের শুরু ও শেষে মেহেদী থাকবেন সেটিই ভেবেছিলেন ক্রিকেট দেব। ফিনকে আউট করে ইংলিশদের নটে গাছ মুড়িয়ে দিয়ে মেহেদীই চূড়ান্ত উৎসবে মাতিয়ে তোলেন সবাইকে।
পাঠকের মতামত: